১। হাইব্রিড ধান।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশে শতকরা ৭৫ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় ৫৯.৮৪% লোকের এবং শহর এলাকায় ১০.৮১% লোকের কৃষিখামার রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৯.১% এবং কৃষিখাতের মাধ্যমে ৪৮.১% মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। ধান,পাট,তুলা,আখ,ফুল ও রেশমগুটির চাষসহ বাগান সম্প্রসারণ,মাছ চাষ,সবজি, পশুসম্পদ উন্নয়ন, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি,বীজ উন্নয়ন ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
এদেশের কৃষকরা সাধারণত সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে থাকে। বেশিরভাগ কৃষক এখনও ফসল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে লাঙ্গল,মই এবং গরু ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। তবে কৃষকদের অনেকেই এখন বিভিন্ন আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় ফলন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ধান ও পাট বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলেও গম,চা,আখ,আলু এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদিত হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় যা বিভিন্ন প্রকল্প ও সংস্থার মাধ্যমে কৃষিখাত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি কৃষিপণ্যের উন্নয়ন থেকে শুরু করে কৃষি, কৃষি প্রকৌশল ও কৃষি অর্থনীতির ওপর গবেষণাসহ কৃষিভিত্তিক শিল্পের উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর -এর কার্যকর সেবা কৃষিখাতে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত। বিএডিসির ২১টি বীজ বহুমুখীকরণ খামার এবং ১৫টি কনট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন রয়েছে। ১২টি বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে কৃষিজাত পণ্যের বীজ যান্ত্রিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তি উদ্যোগ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক সংস্থা কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সরকারি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কৃষিখাত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে কৃষি, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
খাদ্য নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে চাল উৎপাদনের গুরুত্ব অনুধাবন করে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি, কম উৎপাদনশীল ধানের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের চাষ এবং দীর্ঘ দিনের প্রচলিত পুরনো উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার প্রবর্তনের জন্য কাজ করছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র ও এ বিষয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় বহুমুখী শস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান। গম, আলু, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মশলা, ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন শস্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে থাকে। প্রকরণ উন্নয়নের পাশাপাশি মৃত্তিকা ও শস্য ব্যবস্থাপনা,রোগ-বালাই ও ক্ষতিকর পতঙ্গ ব্যবস্থাপনা, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উপকরণ উন্নয়ন, শস্যকর্তন পরবর্তী খামার ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত আর্থ সামাজিক অভিঘাত এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ক্ষেত্র।
পারমাণবিক কৃষি বাংলাদেশের কৃষিখাতে একটি নতুন মাত্রা এনেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) বিকিরণ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন শস্যের ৩৭টি উন্নত জাত তৈরি করেছে। জাতীয় বীজ প্রত্যয়ন সংস্থা এগুলোকে কৃষক পর্যায়ে বিতরণের জন্য অবমুক্ত করেছে।
বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর,রংপুর এবং বগুড়া জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এখানে মাটি শক্ত, লাল ও অনুর্বর। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-এর অধীনে এ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত তুলা উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশে তুলাচাষ প্রসারে ও উৎসাহ দানে কাজ করে থাকে।
বীজ প্রত্যয়ন সংস্থা চাল, গম, পাট এবং আলু বীজের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখে চলেছে।
কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে র কাজ হল মৃত্তিকা সমীক্ষা, সেচ প্রকল্প সমীক্ষা ও এবং মৃত্তিকা নির্দেশিকা ও সহায়িকা তৈরি করা যাতে মৃত্তিকা সম্পদ যৌক্তিক ভাবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বাজারজাতকরণ বিভাগ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি বাজার সংক্রান্ত জরুরি তথ্য যেন সহজে কৃষক, ব্যবসায়ী, সরকার, নীতি নির্ধারক, উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদির মাঝে সরবরাহ করা যায় তার জন্য একটি ই-গর্ভনেন্স প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ১৯৬১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি তথ্য সেবা শুরু করে। গণমাধ্যম বিশেষ করে রেডিও, টেলিভিশন, প্রামাণ্যচিত্র, পোস্টার, লিফলেট, পুস্তিকা, খবরপত্র, সাময়িকী, ব্যানার, ফেস্টুন এসবের মাধ্যমে এই সেবা কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টিবিদ্যা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বোর্ড প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, প্রচারণা বৈঠক, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিবিদ্যায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করে থাকে।
সূত্র:
১।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
২। পরিসংখ্যান পকেট বই ২০০৭
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস